কীভাবে একটি স্টার্টআপ তৈরি করা যায়?

How to build a startup?

আমাদের দেশে তরুণদের প্রধান চাওয়া হল পড়া-শোনা শেষ করে একটি ভালো মানের চাকরি যোগাড় করা। তারা মনে করেন চাকরি করে জীবিকা অর্জন করা কম ঝুঁকি পূর্ণ। কিন্তু যদি তারা ধনী অথবা অতি ধনী হতে চান, চাকরি করে তারা কখনই পারবেন না। এছাড়া এতে অনেক সময় ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকে না। নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। অন্যের সিদ্ধান্তে কাজ করতে হয়। নিজে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে আমার মনে হয় আমি একজন প্রতিবন্ধী। আর একটি সত্য ও কঠিন কথা হল সৎভাবে চাকরি করে কখনই ফাইন্যান্সিয়াল স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব নয়।      

ধনী অথবা অতি ধনী হওয়া এবং ফাইন্যান্সিয়াল স্বাধীনতা অর্জন করার সবচেয়ে উত্তম উপায় হল স্টার্টআপ তৈরি করা। যদিও এতে ঝুঁকি বেশি কিন্তু ব্যক্তি স্বাধীনতা নষ্ট হয় না। আপনি নিজেই আপনার বস। স্টার্টআপের প্রধান চারটি চরিত্রের মধ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আপনি নিজে। বাকি তিনটি প্রধান চরিত্র হল আপনার সহ-প্রতিষ্ঠাতা, আপনার বিনিয়োগকারী এবং আপনার কাস্টমার।  

বর্তমান বিশ্ব-তরুণ সমাজ স্টার্টআপের দিকে ঝুঁকছে। তারা স্টার্টআপের জীবন বেছে নিয়ে জীবনের সমস্ত সময়, শক্তি এবং অর্থ ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করছে। তারা বিশ্বাস করে চাহিদা অনুসারে ইনোভেটিভ পণ্য বা সেবা তৈরির মাধ্যমে একটি স্টার্টআপ তৈরি করতে পারলে আস্তে আস্তে এটাকে বড় করার মাধ্যমে একটি বড় কর্পোরেশন তৈরি করা সম্ভব। 

এই ব্লগটির সম্পূর্ণ ভিডিও :

এবার আসি, কোন পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করলে আপনি একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে ধনী অথবা অতি ধনী হতে পারবেন।

পদ্ধতিগুলো সংক্ষিপ্তভাবে নিচে আলোচনা করা হল:

১। স্টার্টআপের ধারণা তৈরি করুন:

একটি স্টার্টআপ তৈরির সর্ব প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল একটি উৎকৃষ্ট মানের ধারণা তৈরি করা। এমন পণ্য বা সেবা খোঁজ করুন, যেটা একটি বড় সমস্যার সমাধান করবে এবং অনেক মানুষের প্রয়োজন মেটাবে ও অনেক মানুষের কাছে জনপ্রিয় হবে।

২।ধারণা নিয়ে বিস্তারিতভাবে গবেষণা করুন:

আপনার ধারণাটিকে ব্যবসায়ে পরিণত করলে কারা আপনার ক্রেতা হবে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যৎ ক্রেতার ধরন, প্রকৃতি, সম্ভাব্য সংখ্যা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করুন। সংগৃহিত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করুন।

ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিদের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করুন। আপনার ধারণাটি কতটুকু পরিণত তা বোঝতে পারবেন।

৩।ধারণাটিকে আরো উন্নত করুন:

আপনার ধারণাটিকে কীভাবে আরো উন্নত করা যায় তা নিয়ে কাজ করুন। এ সংক্রান্ত গভীর জ্ঞান অর্জন করুন। এর জন্য প্রাসঙ্গিক বই আপনাকে খুব সাহায্য করতে পারে। আবার ইন্টারনেটের মাধ্যমেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারেন।

৪।আপনার ধারণার একটি প্রটোটাইপ তৈরি করুন:

প্রথমে পেনসিল অথবা কলম দ্বারা সাধারণ কাগজে আপনার ধারণার একটি নকশা তৈরি করুন। তারপর কম্পিউটারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল প্রটোটাইপ তৈরি করুন। তৃতীয় ধাপে বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী কিনে বাস্তব প্রটোটাইপ তৈরি করুন।

৫।আপনার তৈরিকৃত প্রটোটাইপ ১০০ লোককে দেখান:

আপনার পরিচিত ব্যক্তি যেমন বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাই-বোন, শিক্ষক-শিক্ষিকা অথবা অন্য কোন পরিচিত ব্যক্তিগণ, যাদের স্টার্টআপ সম্পর্কে ধারণা আছে, তাদের কে আপনার তৈরিকৃত প্রটোটাইপ দেখান। তাদের মতামত সংগ্রহ করুন।        

৬।প্রটোটাইপ আরো উন্নত করুন:

বিভিন্ন লোকের মতামত এবং আপনার নিজস্ব চিন্তা ভাবনার উপর ভিত্তি করে প্রটোটাইপ কে আরো উন্নত করুন। এটার উপর একাধিক বার কাজ করুন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি নিজে ১০০% খুশি না হতে পারছেন। মানুষের কাছ থেকে অর্ডার না আসা পর্যন্ত বার বার তৈরি করুন।     

৭। একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা খোঁজ করুন:

এরপর আপনার তৈরিকৃত প্রটোটাইপ দিয়ে বাস্তব পণ্য তৈরি করবেন, যেগুলো প্রথম বারের মত ক্রেতার কাছে বিক্রি করবেন। এরজন্য একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা খোঁজ করুন, যিনি আপনাকে আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবেন। আপনার সহ-প্রতিষ্ঠাতা কে এমন হতে হবে, যাতে তিনি আপনার মত স্টার্টআপের জন্য ডেডিকেটেড হন। যাকে তাকে না নিয়ে কিছু সময় খরচ করে একজন ভালো সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিয়োগ করুন।

৮।সহ-প্রতিষ্ঠাতা কে কোম্পানীর ৫০% অংশিদার করুন:

যেহেতু আপনার মত আপনারর সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টার্টআপের জন্য সমান অবদান রাখবে, সে জন্য ৫০: ৫০ অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে কোম্পানী তৈরি করুন।

আপনার স্টার্টআপের জন্য একটি ভালো মানের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা (Business Plan), Power Point Presentation এবং ভিডিও Presentation তৈরি করুন।

এক্ষেত্রে যদি আপনার কোন সহায়তা লাগে, তাহলে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন।

৯।একজন বিনিয়োগকারী খোঁজ করুন:

কোম্পানীর অবকাঠামো তৈরি করতে, ভালো ও দক্ষ টিম তৈরি করতে, ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে গুণগত পণ্য বা সেবা নিশ্চিত করতে, এবং কোম্পানীর ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করতে একজন বিনিয়োগকারী খোঁজ করুন। বিনিয়োগকারীর অবশ্যই অনেক টাকা থাকতে হবে। এমন বিনিয়োগকারী কে দেবদূত বিনিয়োগকারী (Angel Investor) বলে।

আশার কথা হল- বাংলাদেশে বর্তমানে অনেকে দেবদূত বিনিয়োগকারী তৈরি হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের বাংলাদেশ স্টার্টআপ, প্রথম সারির কয়েকটি টেলিকম কোম্পানী এবং ব্যক্তি ক্ষেত্রে অনেকে এ্যানজেল ইনভেস্টর হিসেবে কাজ করছেন। সুতরাং এ্যানজেল ইনভেস্টর পাওয়া আপনার জন্য খুব কঠিন হবে না।

যদি আপনার স্টার্টআপ সম্ভাবনাময় হয়, তাহলে এ্যানজেল ইনভেস্টররা আপনাকে খোঁজে বের করবে। শুধু ঠিক মত খোঁজ-খবর রাখতে হবে।                 

১০।বিনিয়োগকারী কে কোম্পানীর ১০% অংশিদার করুন:

বিনিয়োগকারীর কাছে থেকে এমন পরিমাণ টাকা নিন যাতে তিনি কোম্পানীর ১০% অংশিদারিত্ব পান। এটা করার জন্য কোম্পানীর বর্তমান ভ্যালুয়েশন গণনা (Calculation) জানতে হবে। আপনি কোম্পানীর ভ্যালুয়েশন করতে সক্ষম না হলে কোন স্টার্টআপ মেন্টরের সহযোগিতা নিতে পারেন।  

১১।বড় পরিসরে কাজের জন্য পণ্য বা সেবা তৈরি করুন:

এবার আসল কাজ। টার্গেট মার্কেটের জন্য মানসম্পন্ন পণ্য বা সেবা তৈরি করুন। প্রয়োজনীয় অনুমোদনের ব্যবস্থা করুন। পণ্য বা সেবার মানের ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেবেন না।

১২। দশ লক্ষ লোকের কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রি করুন:

আপনি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন প্রথম রাউন্ড বিনিয়োগে ১ মিলিয়ন লোকের কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রি করবেন। লাভের দিকে কম মনোযোগ দিয়ে কোম্পানীর প্রবৃদ্ধি কীভাবে জ্যামিতিক হারে উন্নীত করা যায় তার দিকে অধিক মনোযোগ দিন।  

  

১৩।নতুন বিনিয়োগকারী থেকে টাকা নিন:

এরপর আপনি আরো বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। পণ্য ও বাজার দুটোরই বৈচিত্রতা (Diversification) আনুন। এ কাজের জন্য বিনিয়োগ বাড়ান এবং নতুন বিনিয়োগকারী থেকে টাকা নিন।

১৪।স্টক মার্কেটে কোম্পানী কে তালিকা ভুক্ত করুন: 

যদি আপনার কোম্পানীর ভ্যালুয়েশন স্টক মার্কেটে তালিকা ভুক্ত করার উপযুক্ত হয়, তাহলে তালিকা ভুক্ত করুন। আর না হলে কোম্পানীর ভ্যালুয়েশন ও বিনিয়োগ বাড়ান। আবার চেষ্টা করুন। স্টক মার্কেটে তালিকা ভুক্ত করা খুব কঠিন কাজ নয়।

১৫।স্টক মার্কেটের মাধ্যমে প্রচুর শেয়ার বিক্রি করুন:

যদি আপনার কোম্পানী স্টক মার্কেটে তালিকা ভুক্ত হয়, তাহলে প্রচুর শেয়ার বিক্রি করুন। কিছু দিন অপেক্ষা করুন। এরপর আপনি নিজে, আপনার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং আপনার বিনিয়োগকারী প্রচুর টাকার মালিক হবেন ।

আপনি যাতে সহজে বোঝতে পারেন সেজন্য উপরের ১৫টি ধাপকে ইনফোগ্রাফের মাধ্যমে প্রকাশ করা হল:

উপসংহার:

একটি ভালো স্টার্টআপ তৈরি করার জন্য একটি ভালো আইডিয়া বা ধারণা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও একটি সফল স্টার্টআপের জন্য আইডিয়া শুধু মাত্র ১০% গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু আইডিয়া ভালো না হলে তো আপনি বিনিয়োগ করার জন্য বিনিয়োগকারী খোঁজে পাবেন না। সুতরাং ভালো আইডিয়া খোঁজে বের করুন।

আবার একটি সফল স্টার্টআপের জন্য ইক্সিকিউশন (Execution) ৯০% গুরুত্ব বহন করে। সুতরাং শুধু সম্ভাবনাময় আইডিয়া খোঁজে বের করলে হবে না, এর বাস্তবায়নে নিজেকে আরো মনোযোগী করুন। তাহলেই স্টার্টআপের সফলতা আসবে এবং আপনি হবেন অনেক টাকার মালিক।

এ সংক্রান্ত লেখা সব সময় পেতে আপনার ইমেল ব্যবহার করে Subscribe করুন:


 প্রাসংগিক ব্লগ:

ধনী হওয়ার তিনটি সরল নিয়ম

টাকা ছাড়া শুরু করে কীভাবে ধনী হওয়া যায়?

অনলাইনে উপার্জনের কিছু পদ্ধতি

টাকার অভাব কখনও হবে না যদি এ শিক্ষা থাকে

কীভাবে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে আপনি ধনী হবেন?

কোন সম্পদগুলো মানুষকে ধনী করে?

যে দক্ষতা গুলো আপনাকে ধনী করবে।

কীভাবে চল্লিশে কোটিপতি হবেন?

১০টি সেরা বই, যেগুলো আপনাকে ধনী হতে সাহায্য করবে।

গ্রামে বসে কী কী ব্যবসা করা যায়?


Scroll to Top