মোহাদির দুইটি প্রতিষ্ঠান। একটি শহরে আর অন্যটি গ্রামে। তার দুইটি প্রতিষ্ঠানেই বেশির ভাগ কাজ হয় সরাসরি পরিশ্রমের মাধ্যমে। অর্থাৎ কাজ করলে উপার্জন হয়, না করলে হয় না। এগুলিকে সক্রিয় আয় (Active income) বলা হয়। এছাড়া তার প্রতিষ্ঠানগুলিতে কিছু কিছু কাজ হয়, যেগুলির উপর বার বার পরিশ্রম করা লাগে না। এইগুলি থেকে যে আয় আসে তা হল প্যাসিভ আয় (Passive Income) । যেমন সে কিছু নতুন পণ্য বা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে । তার উদ্ভাবন গুলি প্যাটেন্ট (উদ্ভাবকের মালিকানার আইনি অধিকার) করা। ফলে এগুলি থেকে সব সময় কিছু না কিছু উপার্জন করে। আবার তার কিছু প্রপার্টি রয়েছে, যেমন বাড়ি ও এ্যাপার্টমেন্ট । এইগুলি থেকে ভাড়া বাবদ কিছু টাকা উপার্জন হয়। এসব উৎস থেকে উপার্জন করতে বার বার পরিশ্রম করতে হয় না। একবার ভালোভাবে সেট করে শুধু তদারক করতে হয়।
একবার কিছু টাকা উপার্জন করে তা ব্যবহার করে প্যাসিভ আয় করার কৌশল জানতে হয়। টাকা ঠিকমত কাজে না লাগিয়ে ফেলে রাখলে দিন দিন এর মূল্য কমে। প্যাসিভ আয়ের কৌশল জেনে তা প্রয়োগ করলে টাকা আরও টাকা নিয়ে আসে। তখন মানুষের কাছে টাকা চাকরের মত কাজ করে। প্যাসিভ আয়ের দক্ষতা অর্জন না করে টাকাকে লাঠি দিয়ে বাড়ি দিলে বা গালি দিলে কোন কথা শুনবে না। দক্ষতা অর্জন না করে আপনি টাকার পিছে ছুটতে ছুটতে টাকার চাকর হয়ে যাবেন। এবার দেখুন মোহাদি কীভাবে নতুন নতুন প্যাসিভ আয়ের উৎস তৈরি করেছে।
মোহাদি আরও নতুন প্যাসিভ আয়ের তৈরির জন্য চিন্তা করতে লাগলো। স্টক মার্কেট (শেয়ার বাজার) একটি ভালো প্যাসিভ আয়ের উৎস। এখান থেকে আয় করতে হলে এ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে হয়। মোহাদি স্টক সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে পড়াশোনা শুরু করেছিল। ভালোভাবে জেনে সে স্টক ও বন্ডে বিনিয়োগ করেছিল। শুরুতে তার বিনিয়োগের পরিমাণ কম ছিল। আস্তে আস্তে সে বেশি পরিমাণ টাকা কাজে লাগিয়ে তৃতীয় প্যাসিভ আয়ের উৎস তৈরি করল।
ব্যাংক ডিপিএস (DPS) একটি প্রচলিত প্যাসিভ আয়ের উৎস। এতে উপার্জন খুব কম। তার উপর ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় কারণে মোহাদি এতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। আপনি যদি মূদ্রাস্ফিতি (Inflation) সম্পর্কে জানেন, তাহলে বুঝবেন যে প্রতি বছর টাকার মূল্য যে হারে কমছে তাতে ব্যাংক ডিপিএস এর বৃদ্ধির হার কাজে লাগিয়ে উপার্জন করা কঠিন। বর্তমানে ব্যাংক ডিপিএস এর সুদ হার ৬% এর নিচে কিন্তু মূদ্রাস্ফিতির হার ৬% এর উপরে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ডিপিএস পদ্ধতি লাভজনক না ক্ষতিকর।
সঞ্চয়পত্র একটি ভালো প্যাসিভ আয়ের উৎস। এখানে ১৫ লক্ষ টাকার মধ্যে সুদের হার ১১% এর উপরে। ১৫ লক্ষ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্র কিনলে সুদের হার ৯%। সাধারণ মানুষের জন্য এটা একটি প্যাসিভ আয়ের উপায় হতে পারে। সাধারণত অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ এটাকে একটি প্যাসিভ আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। মোহাদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ব্যাপারে তেমন আগ্রহ ছিল না।
মোহাদির চিন্তা-চেতনা একটু ভিন্ন। সাধারণ ব্যক্তিগণ যেভাবে চিন্তা করেন মোহাদি চিন্তা করেন একটু ভিন্নভাবে। তার বেশি পছন্দ বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ তৈরি করা। সে জন্য সে জ্ঞান তৈরি ও উদ্ভাবন কে কাজে লাগিয়ে উপার্জন করতে মনস্থির করেছিল। তার ধারণা জ্ঞানভিত্তিক সম্পদের উপর বিনিয়োগে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং এ সম্পদ হারিয়ে যাওয়ার, চুরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। জ্ঞানের উপর বিনিয়োগে রিটার্ন অনেক বেশি। আবার সমাজের উপর এর প্রভাব অনেক বেশি। কিন্তু জ্ঞানভিত্তিক সম্পদ তৈরি করা খুব সহজ নয়। এটা অনেক পরিশ্রমের কাজ এবং অনেক সময় সাপেক্ষ।
দেশের মানুষের সমস্যা সমাধান হয় এরকম অনেকগুলি পণ্য ও পদ্ধতি (Product and process) মোহাদি উদ্ভাবন করলো। তার মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহকারী প্রযুক্তি অন্যতম। মোহাদি এটার নাম দিয়েছে প্লেক্সাস (Plexus) । এটাতে এআই (AI) ও বিগডেটা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি একটি ছোট যন্ত্র। এতে তারহীন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। টার্গেট মানুষের সব তথ্য সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াকরণ করে এবং জমা রাখে। এজন্য ছোট্ট ডিভাইসকে আইডির সাথে ইনটিগ্রেট করা থাকে। কেন্দ্রীয় সার্ভারে এর নিয়ন্ত্রণকারী নির্দেশ প্রদান করলে যার সম্পর্কে রিপোর্ট চাওয়া হয়, তার বিস্তারিত ও নিখুঁত তথ্য প্রদান করে। প্লেক্সাস প্রতিটি রিপোর্টে তারিখ, সময় ও রেফারেন্স উল্লেখ করে। এক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্য রিপোর্ট আকারে প্রিন্ট করা যায়। আরও মজার বিষয় হল এ প্রযুক্তিটি ভোয়েজ কমান্ড দিয়ে অপারেট করা যায়।
মোহাদি তার এই উদ্ভাবিত প্রযুক্তি (প্লেক্সাস) প্যাটেন্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে। সুতরাং এটা যত ব্যবহার হবে তার তত উপার্জন হবে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে তাৎক্ষণিক জালিয়াতি এবং দুর্নীতিবাজ লোকদের সনাক্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। সরকারী-বেসরকারী সকল অফিসে এটা ব্যবহার করা যায়। প্রতিষ্ঠান প্রধান বা রাষ্ট্রনায়করা যদি চান তাহলে মোহাদির এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজে সব ধরনের দুর্নীতি দেশ থেকে বিদায় করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশের অতিচালাক দুর্নীতিবাজ লোকেরা এ ডিভাইসকে এড়িয়ে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু কোন লাভ নেই। প্লেক্সাসের কাছে আবার ধরা খাবে। এ বিষয় না হয় থাক। এটা আলোচনা করা আমাদের উদ্দেশ্যে নয়। আমরা প্যাসিভ আয় নিয়েই এখানে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখি।
বই ও ব্লগ লেখার মাধ্যমে ভালো পরিমাণ উপার্জন করা সম্ভব বলে মোহাদি মনে করতো। প্যাসিভ আয়ের উৎস হিসেবে লেখা-লেখির কাজকে সে খুব পছন্দ করতো। তার ভাবনাগুলি নিয়ে কিছু বই ও ব্লগ লিখেছে। একবার লেখা হয়ে গেলে আর তেমন কোনো কাজ নেই। কোনো পরিশ্রম ছাড়াই মোহাদি বছরের পর বছর উপার্জন করছে । মোহাদি প্যাসিভ আয়ের আরও কিছু উৎস তৈরি করতে চায়। এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্ম খুব উপকার পাবে বলে সে বিশ্বাস করে। এটা জানতে মোহাদির সব গল্প বিস্তারিতভাবে পড়ুন।
এরপর পড়ুন: মোহাদির নতুন যন্ত্রের নাম ইডুট্রেকার১