দরজায় কড়া নাড়ছে এইচএসসি ২০২১। আসছে ডিসেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষা যেটা শুরু হওয়ার কথা ছিলো ২০২১ সালের এপ্রিলে। করোনা মহামারীর কারণে অন্যান্য সবধরনের কর্মকাণ্ডের মতোই HSC এক্সামও যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। HSC পরীক্ষা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবনের পরবর্তী গন্তব্যে প্রবেশ করে। তাই ছাত্রজীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাটিতে ভালো করার জন্য সবারই মনোযোগী হওয়া উচিত।
Success Story
শুরুতেই আমি আমার HSC পরীক্ষার experience শেয়ার করি। আমি HSC পাস করেছি ২০১৭ সালে। স্বভাবতই এসএসসি পাস করার পর স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে নতুন নতুন College এ পদার্পনের জন্য অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। আমারও তেমনই নতুন College, শিক্ষাজীবনের নতুন একটি ধাপে প্রবেশ করার জন্য খুবই ভালোলাগা কাজ করেছিল। সিনিয়রদের কাছে শুনেছিলাম SSC-র পর HSC এর জন্য খুবই কম time পাওয়া যায়। তাই তাদের Suggestion অনুযায়ী আমি শুরু থেকেই পড়াশোনা শুরু করেছিলাম।
যেহেতু আমি Physics এ একটু Weak ছিলাম তাই Physics সবসময়ই বেশি পড়তাম, অন্যান্য বিষয়গুলাও পড়তাম। খুবই অল্প সময়ে বলা যায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই কলেজের প্রথম বর্ষ শেষ হয়ে গেলো। শুরু থেকেই সিরিয়াস হওয়ায় প্রথম বর্ষে সববিষয়েই মোটামুটি মানের result করেছিলাম, physics এ খারাপ করেছিলাম। যাইহোক ২য় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। এবার আরো জোরেশোরে পড়ালেখা শুরু করে দিলাম। যেসব বিষয়গুলোতে প্রথম বর্ষে দুর্বল ছিলাম সেগুলোর দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে থাকলাম।
HSC তে যেসব অধ্যায় থেকে Question বেশি আসে যেমন- রসায়নের জৈব যৌগ, রাসায়নিক বিক্রিয়া, ম্যাথের ইন্টিগ্রেশন, ডিফারেনসিয়েশন, ত্রিকোনোমিতি, পদার্থবিজ্ঞানের তাপ, আলো, চাপ, চুম্বক এই চ্যাপ্টারগুলো বেশি বেশি পড়তাম। দেখতে দেখতে Test পরীক্ষার সময় এসে গেলো, পড়াশোনার pressure ক্রমশই বাড়তে থাকলো। তখন প্রতি সাবজেক্টের জন্য time ভাগ করে নিয়ে পড়াশোনা করতাম। একেকটা সাবজেক্ট পড়ার জন্য দুইদিন বা তিনদিন এভাবে সময় ভাগ করে নিতাম। কঠিন সাবজেক্ট গুলা বারবার revision দিতাম। টেস্ট পরীক্ষার জন্য ভালোই preparation নিয়েছিলাম তাই আশানুরুপ result ও পেয়েছিলাম।
তারপর বহুল কাঙ্খিত HSC পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসল। শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন কোচিং সেন্টারগুলোতে Model test দিয়েছিলাম। MCQ তে ভালো করার জন্য বিভিন্ন কলেজের Model Question সলভ করতাম এবং নিজে নিজেই মিলিয়ে দেখতাম কত নাম্বার পেয়েছি। এভাবে পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে প্রতিটি সাবজেক্টের মডেল কোশ্চেন সলভ করতাম। HSC পরীক্ষার আগের দিনগুলাতে ভালোভাবে পড়াশোনা করেছিলাম ফলস্বরুপ HSC তে GPA-5 পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম।
HSC পরীক্ষায় ভালো করার উপায়:
- যেকোনো পরীক্ষায়ই ভালো result করার অন্যতম প্রধান শর্ত কঠোর পরিশ্রম এবং ভালোভাবে পড়াশোনা করা। আমরা জানি পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি। যেকোনো Success এর মূলেই রয়েছে hard working. পরিশ্রমেই মাধ্যমেই জীবনে দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব। HSC এর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষায় সফলতা বা কাঙ্খিত ফলাফল পাবার জন্য অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
- পৃথিবীতে যত জ্ঞানী-গুণী, মনীষী আছে সকলেই তাদের কঠোর অধ্যবসায়ের জন্যই সফলতা অর্জন করেছেন এবং স্বরণীয় হয়ে আছেন। তাই পড়াশোনাতে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকেই অধ্যবসায়ী হতে হবে।
- পড়তে বসার সময় মাথা থেকে জগতের সব ধরনের চিন্তা-ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে এবং শুধু পড়াশোনাতেই attention দিতে হবে তাহলে খুব দ্রুত পড়া হবে এবং যেটা পড়া হবে সেটা একদম মাথায় গেথে যাবে।
- পরীক্ষার অন্তত পনেরদিন আগেই সব পড়া Complete করতে হবে তখন আর নতুন কোনো পড়াশোনা মাথায় না ঢুকানোই ভালো। তখন শুধু বারবার revision দিতে হবে এবং পুরাতন পড়াগুলাই ঝালাই করে নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় পরীক্ষার অতিরিক্ত চাপের কারণে পড়া জিনিসগুলাই বা জানা জিনিসগুলাই পরীক্ষার হলে মাথায় আসে না। বারবার রিভিশন দিলে পরীক্ষার হলে এই সমস্যাটা হবে না।
- সময়ের সঠিক ব্যবহার- জীবনের সর্বক্ষেত্রেই সময়ের কাজ সময়ে শেষ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। তেমনি একজন শিক্ষার্থীকেও সময়ের পড়া সময়ে Complete করতে হবে। পরীক্ষার আগে প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য সময় ভাগ করে নিতে হবে এবং ঐ সময়ের মধ্যেই পড়া Complete করতে হবে।
HSC EXAM Preparation পদ্ধতি:
১) Plan তৈরী করা- পরীক্ষার আগে নিজের মতো করে একটি plan তৈরী করে নিতে হবে। কোন দিন কত ঘন্টা, কোন সাবজেক্ট পড়বো তার একটা routine করে ফেলতে হবে এবং সে মোতাবেক সময় ধরে ধরে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে।
২) পড়ার মাঝে বিরতি নেওয়া- একটানা অনেকক্ষণ পড়তে থাকলে একঘেয়েমি চলে আসে, তখন আর পড়তে ভালো লাগে না। তাই পড়ার attention বাড়ানোর জন্য মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া প্রয়োজন, একে বলে Ice-breaking. এই বিরতিতে refreshment এর জন্য একটা গান শোনা যেতে পারে বা কারো সাথে মজার কোনো story শেয়ার করা যেতে পারে।
৩) Group Study- গ্রুপ স্ট্যাডি পড়াশোনার খুবই ফলপ্রসু একটা পন্থা। অনেক সময় দেখা যায়, একা একা যে পড়া এক ঘন্টাতেও হচ্ছে না গ্রুপ স্টাডিতে অর্ধেক সময়েই সে পড়া পড়ে ফেলা যায়। তাই কঠিন সাবজেক্টগুলা গ্রুপ স্ট্যাডির মাধ্যমে পড়লে ভুলে যাওয়ার possibility কম থাকে।
৪) Routine তৈরী করা- বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ”অনিয়মে রাজ্য চলে না”। পরীক্ষার আগে দৈনন্দিন কাজের একটা রুটিন তৈরী করে ফেলতে হবে, রুটিনে খাওয়ার সময়, গোসলের সময়, নামাজের সময়, ঘুমের সময়, বিনোদনের সময়, পড়াশোনার সময় ঠিক করে নিতে হবে এবং রুটিনের বাইরে না যাওয়াই ভালো।
HSC পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়ার Technic :
- খাতায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা- অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা প্রচুর জানে এবং প্রচুর পড়ালেখা করে কিন্তু সঠিকভাবে পরীক্ষার খাতায় উপস্থাপন করতে না পারায় ভালো ফলাফল করতে পারে না তাই প্রশ্নে যেটা চাওয়া হয়েছে সেই উত্তরটাই খাতায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা লিখলে শিক্ষকরা অনেকসময় বিরক্ত হয় ফলে নাম্বার কম পাওয়ার possibility থাকে।
- হাতের লেখা সুন্দর করা- আমরা প্রায়ই শুনে থাকি “ আগে দর্শনদারী, পরে গুণবিচারী”। সুন্দর এবং পরিপাটি হাতের লেখার খাতা দেখলে পরীক্ষকদের শিক্ষার্থী সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয় যার প্রভাব শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতাতেও পড়ে যা শিক্ষার্থীকে অধিক নাম্বার এবং ভালো result অর্জন করতে সাহায্য করে।
- সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া- পরীক্ষার সময় time management খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুর দিকের প্রশ্নের উত্তর বড় করে লিখতে গিয়ে পরবর্তীতে দেখা যায় শেষের দিকের উত্তরগুলো লেখার টাইম পাওয়া যায় না। এতে পরীক্ষায় নাম্বার কম আসে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই সুন্দরভাবে টাইম ধরে ধরে answer করতে হবে। কোনো প্রশ্ন ফেলে রেখে আসা যাবে না।
বর্তমানে আমরা COVID Situation এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কোভিড বিষয়টিকে মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সিলেবাসও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ে সঠিকভাবে, পরিপূর্ণ Guideline মেনে Preparation নিলে অবশ্যই কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।
”যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে, হবেই হবে দেখা, দেখা হবে বিজয়ে”
সর্বোপরি আমরা জানি, স্বাস্থ্যেই সকল সুখের মূল। শরীর ভালো না থাকলে কোনো কাজে মন বসে না, পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করে না। তাই শেষ সময়ে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি take care করতে হবে। সবাইকে নিজেদের ধর্ম অনুসারে প্রার্থনা করতে হবে কারণ প্রার্থনা শারীরিক, মানসিক প্রশান্তি দেয়, মনকে প্রফুল্ল রাখে।
আশাকরি শিক্ষার্থীরা সবাই ভালোভাবে পড়াশোনা করবে, ভালো Preparation নিবে, খুবই ভালোভাবে Exam দিবে এবং expected result অর্জন করবে। সবাইকে সুন্দর একটি result উপহার দিবে। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে। সুন্দর স্বাস্থ্য, সুস্থ্য মন এবং আশানুরুপ ফলাফল কামনা করি। সবার প্রতি অনেক অনেক ভালোবাসা, দোয়া এবং শুভকামনা রইলো।