Mohadi took new initiative

Mohadi took a new initiative

মোহাদি নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। সে এমন উদ্যোগ নিতে চেয়েছিল, যেটা অনেক মানুষের সমস্যার সমাধান করবে এবং টেকসই হবে। এর জন্য সে মোটামুটি দক্ষতা অর্জন করেছে। তার নতুন উদ্যোগের নাম ঠিক করলো, লোগো তৈরি করলো এবং একটি স্লোগান বানালো। তার উদ্যোগের উপযুক্ত উদ্দেশ্যে লিখলো। SWOT বিশ্লেষণ করলো।

সেবা কেন্দ্রীক উদ্যোগ মোহাদির পছন্দ এবং সে বিষয়ে এর উপর কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। সুতরাং তার উদ্যোগ ভালো হবে বলে মনে হলো। এছাড়া কাজের প্রতি তার আগ্রহ প্রচুর।

মোহাদি চাকরির পাশা-পাশি তার নতুন উদ্যোগের জন্য কিছু কিছু কাজ করতে থাকলো। প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করতে লাগলো। ট্রেডলাইসেন্স সংগ্রহ করলো এবং প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক আ্যাকাউন্ট খুললো। ব্যবসার নামে ভ্যাট নিবন্ধন করলো। ব্যবসার একটি পূ্র্ণ পরিকল্পনা তৈরি করলো। সে মেন্টরের সাথে আলোচনা করে তার সার্বিক পরিকল্পনা আরও ত্রুটিহীন করলো।   

মোহাদি বেতনের টাকার সামান্য অংশ ব্যাংকে জমা করতো। সেই টাকাই তার একমাত্র পুঁজি। পরিমাণ খুব বেশি ছিলো না। এই টাকার কিছু অংশ দিয়ে একটি দুই কামরার অফিস ভাড়া নেওয়া ও এর সাজসজ্জায় খরচ করলো। কিছু টাকা রেখে দিলো কমপক্ষে ছয় মাস অফিস এর অস্থায়ী খরচের জন্য।   

নিজের অফিস শুরু করেই মোহাদি তার চাকরি ছেড়ে দিলো। কারণ এক সাথে দুই কাজ করলে কোনো কাজই ভালো হয় না। চাকরি ছাড়তে গিয়ে সে অনেক বাধার মধ্যে পড়লো। তার অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তারা মোহাদিকে ছাড়তে চাচ্ছিলেন না। তাঁরা তাকে প্রায় ডবল বেতনের অফার দিলেন। তাতে কাজ না হওয়ায় প্রমোশন দিয়ে একটি শাখার প্রধান করতে চাইলেন। এতেও কাজ হলো না। শেষে তিন মাস সময় নিলেন। এর মধ্যে হয়ত মোহাদির বদলে অন্য কাউকে পেয়ে যাবেন।

মোহাদি একটি শক্ত লক্ষ্য স্থির করে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। তার কাজ নিয়ে সে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ (passionate)। তার স্বপ্ন অনেক দিনের। তার নিজের প্রতিষ্ঠান থাকবে এবং এর মাধ্যমে অনেক মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পাশা-পাশি সমাজ ও দেশের কাজ উন্নতি হবে।

মোহাদির নিজের অফিস খুব ছোট । সব মিলে মানুষ মাত্র চার জন। মোহাদি সহ তিনজন স্থায়ী আর একজন অস্থায়ী। মোহাদি নিজের অফিসে দিন-রাত কাজ করছে। তার কোনো ক্লান্তি নেই। তার অধীনস্থ লোকরাও যথেষ্টভাবে তাকে সাপোর্ট করছে। তার কাছে যে পরিমাণ টাকা আছে তা দিয়ে বাসা ও অফিসের খরচ মিটিয়ে ছয় মাসের বেশি চলা সম্ভব নয়।

ছয় মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো আয় না হলে মোহাদিকে পথে বসতে হবে। কিন্তু মোহাদি খুব আত্মবিশ্বাসী। সে মনে করে ভালো কিছু নিশ্চয় হবে। কিন্তু আনিতা খুব ভয় পাচ্ছে। প্রতিদিনই মোহাদিকে এ ব্যাপার আনিতার কাছ থেকে ঋণাত্মক সংবাদ শুনতে হচ্ছে। কেউ কেউ বলছে, “চাকরি কি নেই?” বাড়ির মালিকেরও নাবাচক প্রবণতা। শ্বশুর বাড়ির লোকজনও বিভিন্নরকম কথা বলছেন । বন্ধুদের বেশির ভাগই বলছে, এটা বোকামী। মানুষ চাকরি পায় না, আর সে চাকরি ছাড়ছে! আত্মীয়স্বজনরা তো যোগাযোগই বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের অনেকে বলাবলি করছে, টাকা-পয়সা ধার কিন্তু দিতে পারবে না। নিজের পরিবারের লোকজন মনে করছে এটা পাগলামী। এত ভালো বেতনের চাকরি ছেড়ে নিজের প্রতিষ্ঠান করাকে অনেকে পাগলামী বা বোকামী মনে করছে।

কোনো নাবাচক কথাকে মোহাদি পাত্তা দেয় নি। সে ব্যস্ত কাজ নিয়ে। সবাই তাকে হতাশ করলেও তার মেন্টর আর স্টাফরা তাকে পুরোদমে সাপোর্ট করছে। মনে মনে বিশ্বাস ছিল অবশ্যই ভালো কিছু হবে। এভাবে প্রায় ছয় মাস শেষ হলো। একটা টাকাও উপার্জন নেই। মাস শেষে কোনো আয় না আসলে খুব বিপদ হবে। অনেক খরচ! বাসা ও অফিস ভাড়া, খাওয়া খরচ, স্টাফদের বেতন সব মিলে অনেক টাকা লাগবে। তারপর মায়ের কাছেও টাকা পাঠাতে হবে।

সপ্তম মাস থেকে উপার্জন না হলে মোহাদি কী করবে? কারও কাছে ঋণ করবে? তার সব ছেড়ে পালিয়ে যাবে? এধরনের অনেক ভাবনা এসে মাথায় ভর করলো। স্টাফদের একজন বিকল্প ভাবতে লাগলো। অন্য চাকরির সন্ধান করতে লাগলো। এটা বুঝতে মোহাদির বাকি রইলো না। একবার চিন্তা করলো, আনিতার সঙ্গে কি শেয়ার করবে? আবার ভাবলো এটা ঠিক হবে না। এমনিই তো সে ভয়ে আছে এই খারাপ খবর শুনলে আরও আত্মবিশ্বাস কমে যাবে।

মোহাদি ভাবলো যে কোনো বিষয়ে আনিতার কাছে পরিষ্কার থাকা দরকার। অনেক চিন্তা করে সে আনিতার সাথে শেয়ার করলো। মোহাদির বর্তমান অবস্থার কথা  শুনে আনিতা অনেক আবেগিক হয়ে উঠলো। সে অনেক কথা বললো। আনিতা বললো, “আগেই বলেছিলাম, চাকরি করাই ভালো। এসব ছেড়ে তুমি আবার চাকরি শুরু করো। মাস খানিক চলার টাকা আমি ব্যবস্থা করতে পারবো। অফিসের জিনিসপত্র বিক্রি করে দাও, কিছু টাকা আসবে। আর আমার সামান্য গয়না যা আছে তা বিক্রি করে  দিব”। আনিতা আরও অনেক বুদ্ধি দিলো। তাকে বিকল্প একটি বুদ্ধি দিলো। মোহাদিকে বললো, “এসব ছেড়ে তুমি মেসে থাকো আর চাকরির খোঁজ করো। আমি কিছুদিন বাবার বাড়ি থাকি। হাতে টাকা এলে আবার আমরা বাসা নিবো”।

আনিতার কোনো বুদ্ধিই মোহাদির ভালো লাগলো না। সে এসব হতাশার কথা বাদ দিয়ে তখনও আশাবাদী। মনে মনে ভাবলো নিশ্চয় ভালো কিছু হবে। সে ভাবলো, “কিছু দিন না হয় না খেয়ে থাকবো কিন্তু স্বপ্ন ছাড়বো না” ।

সপ্তম মাস শুরু হলো। মোহাদির কাছে যে পরিমাণ টাকা আছে তা দিয়ে দুইজনের খাওয়া খরচের বেশি হবে না। বাসা ও অফিস ভাড়া বাকি। প্রতি মাসে পাঁচ তারিখের মধ্যে কর্মচারীদের বেতন দিতো। আট তারিখ হয়ে গেছে তখনও বেতন দিতে পারে নি। বাড়ির মালিক ইতোমধ্যে কয়েক বার তাগাদা দিয়ে গেছে। মোহাদি কয়েক দিনের সময় নিয়েছে।

মোহাদি ভাবলো যে কিছু টাকা ধার নিতে পারলে এ মাসের খরচ মেটানো যেতো। এ উদ্দেশ্যে কয়েকটি জায়গায় ফোন করলো। অনেকে ঘটনা শুনে প্রসঙ্গ বদলায়। শেষে একজন ধনী আত্মীয় তাঁর সাথে দেখা করতে বললেন। তিনি টাকা ধারের উদ্দেশ্য জানার পর মুখের উপর বললেন, “টাকা নিবে বুঝলাম, এ টাকা শোধ করবে কী করে?”  শুনে মোহাদির মন খারাপ হয়ে গেল। কোনো কথা না বলে বের হয়ে আসলো। টাকার ব্যবস্থা করতে পারলো না ।

অফিসে ফিরে মোহাদি কিছু জরুরী কাজ শেষ করলো। স্টাফদের আরও মোটিভেট করলো। বাসায় ফিরে আনিতার কাছে কিছু হতাশার বাণী শুনে মনটা আরও খারাপ হলো । কিন্তু সে হতাশ হলো না।

পরদিন ঘুম থেকে উঠে মোহাদি অফিসে গেলো। মাথায় বিশাল কাজের ভার ও টাকার চিন্তা। চারদিক থেকে চাপ বাড়ছে। হঠাৎ একটি ফোন এলো। জানলো তাদের প্রজেক্ট নির্বাচিত হয়েছে। মোট খরচের ১০% অগ্রিয় বিল তার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে তিন দিনের মধ্যে পেয়ে যাবে। খবর পেয়ে স্টাফদের খুশির শেষ নেই। সবচেয়ে বেশি খুশি হলো আনিতা।

মোহাদি যে প্রজেক্ট পেয়েছিল তার প্রথম পক্ষ একটি বিদেশী বড় বহুজাতিক কোম্পানী। সে কোম্পানী বাংলাদেশে কিছু মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে। তাদের প্রজেক্টে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে গবেষণা ও উদ্ভাবন শাখায় মোহাদির অফিস কাজ পায়। আর প্রজেক্টটির দ্বিতীয় পক্ষ হলো বাংলাদেশ সরকার।

প্রথম কাজ শেষে মোহাদি যে পরিমাণ টাকা উপার্জন করলো চাকরি করলে সারা জীবনেও তা উপার্জন করতে পারতো না। লাভের টাকা দিয়ে সে অফিস বড় করলো, ভালো ও মেধাবী কর্মী নিয়োগ করলো, মায়ের জন্য একটি পাকা বাড়ি তৈরি করে দিলো, নিজের ও অফিসের জন্য একটি গাড়ি কিনলো এবং অভিজাত এলাকায় একটি মধ্যম আকারের ফ্ল্যাট কিনলো। 

আরও পড়ুন: নতুন করে মোহাদির তিনটি  চ্যালেঞ্জ 
Scroll to Top