নিজের অফিস নিয়ে মোহাদি বেশ ভালোই চলছিলো। এক প্রজেক্ট শেষ হতে না হতে নতুন প্রজেক্টের অফার আসে। লাভের দিকে নজর না দিয়ে ভালো কাজের দিকেই তার মনোযোগ বেশি। শুরুর দিকে তার প্রতিযোগী তেমন ছিলো না। তার সাফল্য দেখে প্রতিযোগীর সংখ্যা বেড়ে গেল। কেউ যোগ্য কেউ অযোগ্য। কোনো কোনো প্রতিযোগীর কাজই হলো মোহাদির কাজে বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া। আবার কোনো কোনো প্রতিযোগীর কাজ হলো দোষ ধরা। কয়েকটি প্রতিযোগী এসেছে রাজনীতির ছত্রছায়ায়। অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক তাদের কাজ নিতেই হবে। লবিংই তাদের মূল পুঁজি। ফলে মোহাদির অফিস অনেকগুলি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লো।
চ্যালেঞ্জ#১:
মোহাদি যে দল তৈরি করেছিল তা ছিলো অত্যন্ত দক্ষ। বেশ কয়েক বছর ধরে অনেক অর্থ ও সময় ব্যয় করে সে তার দল তৈরি করেছিলো। তার দলের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কয়েক জনকে বেশি সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিযোগীরা হাতিয়ে নিলো। একারণে একটি সুগঠিত দল ভেঙ্গে গেলো। এবং তাদের মাধ্যমে প্রতিযোগীরা মোহাদির প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কৌশল জেনে গেল। এছাড়া দল ভেঙ্গে যাওয়ায় হাতে থাকা কাজ সুন্দরভাবে শেষ করতে বিলম্ব হলো। এতে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে থাকলো। ফলে নতুন কাজ পেতে অসুবিধা হতে লাগলো।
চ্যালেঞ্জ#২:
কিছু প্রতিযোগীর পেছনে বড় নেতা থাকায় তারা বাড়তি সুবিধা পেতে থাকলো। কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের তারা হাত করে তাদের পক্ষে কাজ নিয়ে নিলো। এ ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মোহাদি নতুন কাজ পেতে বাধার মুখে পড়লো।
চ্যালেঞ্জ#৩:
প্রতিযোগীরা পারিবারিক ও সামাজিক ভাবেও বাধা দিতে থাকলো। এমন কী অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল করতে চাঁদাবাজ কয়েকটি গ্রুপকে লেলিয়ে দিলো। এর মধ্যে টোকাই কনক মোহাদির অফিসে এসে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করলো। টেরা ফজা ইচ্ছাকৃত ভাবে মোহাদির গাড়িতে মোটরবাইক দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ঝামেলা তৈরি করলো। সে গাড়ির ক্ষতি করলো। উল্টো পথ রোধ করে পুরনো ও ভাঙ্গা বাইকের ক্ষতি পূরণ নিলো। মোহাদি বাজার করতে গেলে ভিড়ের মধ্যে কিছু অভদ্র লোক কারণ ছাড়াই ধাক্কা দিতো। শুধু তাই নয়, আনিতা বাসা থেকে বের হলে একদল বখাটে ছেলে বিভিন্ন ভাবে অঙ্গভঙ্গি দেখাতো। ফলে পারিবারিক অনিরাপত্তার কারণে মোহাদির কাজে ব্যাঘাত ঘটতে লাগলো।
এসব চ্যালেঞ্জের মুখে মোহাদি কিছুটা ভীত ও শঙ্কিত হলো। প্রথমে আনিতার সাথে শেয়ার করলো। আনিতা অনেক ভয় পেলো। এমনিতে তার আত্মবিশ্বাস কম তার উপর এমন নেতিবাচক খবরে খাওয়া ও ঘুম ছেড়ে দিলো। মোহাদিকে বাসা থেকে বের হতে বারণ করলো। আর নিজেও বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিলো। সে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়লো। মোহাদি তাকে সাহস দেওয়ার অনেক চেষ্টা করলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। শেষে বাসায় কয়েকজন গৃহকর্মী রেখে দিলো যাতে আনিতা ভয় না পায়। ভয়ে আনিতা মোহাদিকে পরামর্শ দিলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বিদেশ চলে যেতে। মোহাদির এ পরামর্শ পছন্দ হলো না।
মোহাদির পরিবারের মধ্যে বিষয়টি জানা-জানি হয়ে গেল। তার মা খুব চিন্তিত হলেন। তিনি বার বার নামাজ পড়ে মোহাদির জন্য দোয়া করতে লাগলেন। তার সব ভাইবোন উদ্বিগ্ন হলেন। তারা বার বার মোহাদিকে ফোন করে সতর্ক থাকতে বললেন। মোহাদির দুলাভাই, জব্বারুল ইসলামও খুব অস্থির হয়ে ওঠলেন। তিনি গ্রামে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই তার বিভিন্ন লোকের সাথে ওঠাবসা আছে। তিনি মোহাদিকে তার ক্ষমতার কথা জানালেন। অনুমতি পেলে তার বাহিনী নিয়ে হাজির হয়ে যাবে। কিন্তু তাকে নিষেধ করে দিলো। শুধু দোয়া করতে বললো।
এরপর মোহাদি তার স্টাফদের সাথে শেয়ার করলো। কেউ কেউ নতুন। তারা খুব ভয় পেয়ে গেল। পুরনো কয়েকজন আইনের আশ্রয় নিতে মোহাদিকে বললো। কেউ বললো অফিস পরিবর্তন করে অন্য শহরে যেতে। একজন স্টাফ বললো, “আমরা কি কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানের অংশীদার করতে পারি? তাহলে সব ঝামেলা মিটে যাবে এবং আমরা আরও বড় সুযোগ পাবো” । বাকি সবাই এতে সায় দিলো। মোহাদি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে আরও কিছুক্ষণ চিন্তা করলো। সে কোন অন্যায়ের সাথে আপস করবে না বলে মনস্থির করলো। সে ভাবলো কোনো ক্ষমতাশালীকে অংশীদার করা মানে অনেক ধরনের অসততা ও অন্যায় কে সায় দেওয়া। সে আরও চিন্তা করলো এতে ব্যক্তি স্বাধীনতা নষ্ট হবে এবং প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা নষ্ট হতে পারে।
মোহাদি খুব সাবধানে চলাফেরা করতে লাগলো। এর মধ্যে সে তার মেন্টর সাহেবের সাথে আলোচনা করলো। তিনি তখনি মোহাদিকে কিছু বললেন না। কিছু সময় নিলেন। তারপর তাঁর এক বন্ধুকে ফোন করলেন। তাঁর বন্ধু পুলিশে কাজ করেন। তিনি পুলিশের ডিআইজি। তারপর মোহাদিকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার জন্য লোকাল থানায় জিডি করতে পরামর্শ দিলেন। এরপর তিনি মোহাদিকে ব্যবসায়ের কৌশলের উপর অনেক বড় একটি ব্যাখ্যা দিলেন।
মোহাদি তার মেন্টরের পরামর্শে অনেক আত্মবিশ্বাসী হলো। সে ব্যবসার কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলো। কয়েক দিন সময় নিয়ে চিন্তা করে তার প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন কৌশল তৈরি করলো। একই সেবার জন্য সব প্রতিষ্ঠান একই রকম কাজ করা একটি গতানুগতিক ধারা। এটা খুব ভালো কৌশল না। এমন কী ব্যবসা টিকে রাখাও কষ্টকর। একে ‘রেড ওশান’ স্ট্যাটেজি বলে। মোহাদি ‘রেড ওশান’ স্ট্যাটেজিতে বিশ্বাসী নয় । মোহাদি তার প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘ব্লু ওশান’ স্ট্যাটেজি তৈরি করলো। ফলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হলো। সব ধরনের সংঘাত থেকে বেঁচে গেল।
কৌশল পরিবর্তন করে মোহাদি আর নতুন কোনো প্রজেক্টের জন্য প্রতিযোগিতা করলো না। তার গবেষণা ও উদ্ভাবন দল সুগঠিত করলো। কয়েক বছরের মধ্যে অনেকগুলি বড় বড় উদ্ভাবন করলো। এরপর এগুলোর প্যাটেন্ট করে নিলো। ফলে সে আজীবন তার উদ্ভাবন থেকে সুবিধা পেতে থাকলো।
পরের অধ্যায়: গ্রামের প্রতিষ্ঠান