অনেকের কাছে এটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। যদি আপনার কাছেও বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলে হাজারো প্রকৃত ধনীদের জীবন কাহিনী পড়লে জানতে পারবেন। তাঁরা কেউ সংক্ষিপ্ত পথে ধনী হওয়ার চিন্তা করেননি এবং অবৈধ উপায় অবলম্বন করেন নি। তাঁরা সবাই শূন্য হাতে শুরু করে অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনা করে ধাপে ধাপে নিজের অবস্থার উন্নতি করেছেন এবং ধনী হয়েছেন। এই লেখায় প্রকৃত ধনীরা কীভাবে শূন্য থেকে শুরু করে অতি ধনী হয়েছেন তার কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
- উপায়#১: অতি ধনীরা স্মার্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেন
- উপায়#২: অতি ধনীরা কাল ক্ষেপন করেন না
- উপায়#৩: অতি ধনীরা সমমনাদের সাথে বন্ধুত্ব করেন
- উপায়#৪: অতিধনীরা সুযোগের অপেক্ষা না করে নতুন সুযোগ তৈরি করেন
- উপায়#৫: অতি ধনীরা শেখার উপর প্রচুর গুরুত্ব দেন
- উপায়#৬: অতি ধনীরা কিছু জিনিস কে না বলতে পারেন
- উপায়#৭: অতি ধনীরা নিজেদের প্রতি বেশি বিনিয়োগ করেন
- উপায়#৮: অতি ধনীরা স্কেলেবল ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন
- উপায়#৯: অতি ধনীরা খুব মিতব্যয়ী
- উপায়#১০: অতি ধনীরা বিনিয়োগের ব্যাপারে খুব স্মার্ট
নিচে উপায়গুলি সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হল:
উপায়#১: অতি ধনীরা স্মার্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেন
যারা অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাঁরা তাদের জীবনের লক্ষ্য প্রথমে স্থির করেছেন। তাঁরা একটিই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এটা করতে গিয়ে তাঁরা অন্য সুযোগ গুলো ত্যাগ করেছেন। যেমন বিল গেটস সফটওয়্যার তৈরির কাজে এতটাই মনোযোগী ছিলেন যে Harvard University এর মত প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা ইস্তফা দিয়েছিলেন।
অতি ধনীরা নিজের লক্ষ্যের উপর অবিচল দৃষ্টি রেখে শূন্য হাতে অগ্রসর হয়েছেন, ফলে কোন না কোন উপায়ে অর্থের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল।
স্মার্ট (S=Specific, M= Measurable, A= Achievable, R= Realistic and T=Time Bound) লক্ষ্য স্থির করা এবং তা প্রতিটি পদকক্ষেপে ধরে রাখাই হল আসল কথা।
উপায়#২: অতি ধনীরা কাল ক্ষেপন করেন না
যাঁরা প্রকৃত ধনী হয়েছেন, তাঁদের একটি সাধারণ এবং বিশেষ বৈশিষ্ট হল তাঁরা যা পারেন তা অনেক ছোট বেলা থেকে শুরু করেছিলেন।তাঁরা কোন কাল ক্ষেপন করেননি। ওয়ারেন বাফেট ৭ বছর বয়সে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোকাকোলা পানীয় বিক্রি করার মাধ্যমে প্রথম উপার্জন শুরু করেছিলেন। বিল গেটস ১৯ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিক ভাবে Microsoft শুরু করেছিলেন। আবার মার্ক জাকারবার্গ ১৯ বছর বয়সে Facebook শুরু করেছিলেন।
উপায়#৩: অতি ধনীরা সমমনাদের সাথে বন্ধুত্ব করেন
প্রকৃত ধনী ব্যক্তিগণ সমমনা ব্যক্তিদের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। তাঁরা মনে করেন যাঁরা বড় স্বপ্ন দেখেন তাঁদের সাথে বন্ধুত্ব করলে নিজেরও স্বপ্ন বড় হয়, জ্ঞান শেয়ার করা যায় এবং নিজেকে আপডেট রাখা যায়। তাঁরা প্রায় সবাই নিজস্ব ক্ষেত্রের উপর অত্যন্ত দক্ষ একজন মেন্টর নিয়োগ করেন।
জ্ঞানী ব্যক্তিরা বলে থাকেন, “Your network is your net worth!”
উপায়#৪: অতিধনীরা সুযোগের অপেক্ষা না করে নতুন সুযোগ তৈরি করেন
যাঁরা বিলিয়নার হয়েছেন তাঁরা সবাই অনেক বড় সমস্যার সমাধান করেছেন। তাঁরা সাধারণ ভাবে সমাধান খোঁজেন নি। তাঁদের কাজের মধ্যে বিশাল আকারের ইনোভেশন ছিল। এর মাধ্যমে নতুন অনেক কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেমন বিলিয়নার ইলন মাস্ক গাড়ি তৈরির কথা যখন ভেবে ছিলেন, তখন গতানুগতিক চিন্তা করেন নি। তিনি ভেবেছিলেন, এমন ধরনের গাড়ি তৈরি করবেন, যাতে প্রযুক্তিগত সুবিধা বেশি এবং জ্বালানী খরচ কম হবে। অনেক সাধনার পর ইলনের ‘টেসলা’ গাড়ি নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এর ফল স্বরূপ জনাব মাস্ক বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েছেন। অথচ তিনি প্রায় খালি হাতে তাঁর স্বপ্ন বুননের কাজ শুরু করেছিলেন।
ইলন মাস্ক ছিলেন যেমন মেধাবী, তেমন পরিশ্রমী। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে ’PayPal ‘এর মত কোম্পানী তৈরি করেছেন কোন পুঁজি ছাড়ায়। এ কোম্পানী বিক্রি করে তিনি রাতারাতি উপার্জন করে ছিলেন কয়েক শত মিলিয়ন ডলার। এই অর্থ তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন ‘টেসলা’ ও ’স্পেস এক্স’ তৈরির কাজে।
তাহলে ভাবুন, ইলন মাস্ক কীভাবে শূন্য থেকে বিলিয়নার হয়েছেন?
উপায়#৫: অতি ধনীরা শেখার উপর প্রচুর গুরুত্ব দেন
প্রকৃত ধনী ব্যক্তিগণ শেখা কে খুব গুরুত্ব দেন। এ জন্য তাঁরা প্রচুর বই পড়েন। বিল গেটস বছরে গড়ে ৫০ টি বই পড়েন। ইলন মাস্ক প্রতিদিন দু’টি বই পড়েন। ওয়ারেন বাফেট প্রতিদিন ৫- ৬ ঘন্টা পড়েন। মার্ক জাকারবার্গ প্রতি দুই সপ্তাহে একটি বই পড়ার পরিকল্পনা করেছেন। তাঁরা সবাই বিলিয়নার এবং শিখতে পছন্দ করেন।
বই পড়লে পজিটিভ শক্তি বেড়ে যায়। ফলে কাজ করার উৎসাহ বাড়ে। এটা ধনী হওয়ার পক্ষে কাজ করে।
প্রাসঙ্গিক ব্লগ: ১০টি সেরা বই, যেগুলো আপনাকে ধনী হতে সাহায্য করবে।
উপায়#৬: অতি ধনীরা কিছু জিনিস কে না বলতে পারেন
অতি ধনীদের সাথে সাধারণ মানুষের পার্থক্য অনেক। তাঁরা জীবনে অনেক সাধনা করেন। তাঁরা নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলা মানুষ। তাঁরা অনেক কিছু কে না বলতে পারেন, যা অন্যরা পারেনা।
যে কোন ধরনের অপচয় কে অতি ধনীরা না বলেন। তাঁরা সময়, অর্থ ও শক্তি কোনটির অপচয় করেন না। এই তিনটির উপযুক্ত ব্যবহার তাঁরা জানেন। কোন দ্বিধা ছাড়া এই তিনটির অপচয় কে না বলতে পারেন।
অতি ধনীরা ঋণ কে না বলেন। তাঁরা ঋণ না করে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের উপর নির্ভর করেন। এতে দুটো সুবিধা। প্রথমটি হল- ব্যবসায়িক অংশিদার পাওয়া, যেখানে ঝুঁকি শেয়ার করা যায়। দ্বিতীয়টি হল-ঋণের জন্য কোন সুদ গুণতে হয় না।
অতি ধনীরা অর্থ জমিয়ে রাখা কে না বলেন। তাঁরা অর্থ জমিয়ে না রেখে উপযুক্ত জায়গায় বিনিয়োগ করেন। তাঁরা সবাই স্মার্ট বিনিয়োগকারী। অর্থ জমিয়ে রাখলে মূদ্রাস্ফিতির জন্য এর পরিমাণ কমে।
অতি ধনীরা ৯টা–৫টা কে না বলেন। তাঁরা সাধারণ মানুষের চেয়ে অতিরিক্ত কাজ করেন। সাধারণ মানুষ সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা কাজ করেন। আর অতি ধনীরা ৯০ থেকে ১০০ ঘন্টা কাজ করেন।
অতি ধনীরা স্বপ্লকালীন লক্ষ্য কে না বলেন। তাঁদের লক্ষ্য বড় থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদী টার্গেট করে কাজ করেন।
অতি ধনীরা বিলাসী জীবন যাপন কে না বলেন। তাঁদের প্রায় সাধারণ জীবন যাপন করেন। ওয়ারেন বাফেট প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের মালিক হওয়ার পরও ৬০ বছর আগের বাড়িতে থাকেন।
উপায়#৭: অতি ধনীরা নিজেদের প্রতি বেশি বিনিয়োগ করেন
প্রকৃত ধনী ব্যক্তিরা এমন নিজেদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলেন, যেখানে অনেক বেশি উপার্জন করা সম্ভব। এজন্য তাঁরা তাঁদের কাজের জন্য নিজেদের প্রতি বেশি বিনিয়োগ করেন। তাঁরা জানেন নিজে দক্ষ না হলে ভাড়া করা মানুষ দিয়ে আসল কাজ হয় না। এ কারণে শুরুতে ছোট আকারে শুরু করা উদ্যোগ কে অনেক বার চেষ্টা করার মাধ্যমে নিজেদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলেন এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ান।
উপায়#৮: অতি ধনীরা স্কেলেবল ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন
সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠা কে হাইলি স্কেলেবল করা যায় না। এটা নির্ভর করে ব্যবসার ধরণের উপর। যত বড় সমস্যা কে সমাধান করে কাস্টমাদের ভ্যালু প্রদান করা যাবে, তত বেশি উপার্জন হবে এবং ব্যবসাও বড় হবে। যেমন বিল গেটস ব্যক্তিগত কম্পিউটারের (PC) অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করে যে সমাধান দিয়েছেন, তা পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছিল। ফলে তিনি অনেক অতি ধনী হতে পেরেছিলেন।
প্রাসঙ্গিক ব্লগ: কীভাবে একটি স্টার্টআপ তৈরি করার মাধ্যমে প্রচুর টাকা উপার্জন করা যায়?
উপায়#৯: অতি ধনীরা খুব মিতব্যয়ী
যারা অতি ধনী হয়েছেন, তাঁরা শুরু থেকে ধনী নন। অতি ধনীদের ৭৪% ই শূন্য থেকে শুরু করে নিজের চেষ্টার দ্বারা বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে অতি ধনী হয়েছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন মিতব্যয়ী। প্রয়োজনের অতিরিক্ত তাঁরা কখনই খরচ করেন নি। এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে বিভিন্ন মোটিভেশনাল বইয়ে। একটি ছোট্ট উদাহরণ দিই। ইকমার্স জায়্যান্ট অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোস বিলিয়নার হওয়ার পরও ২০১৩ সাল পর্যন্ত হোন্ডা এ্যাকোর্ড (Honda Accord) গাড়ি ব্যবহার করেছেন। বেজোসের অ্যামাজনের মূলনীতিই হল মিতব্যয়ীতা। একারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইকমার্স কোম্পানী অ্যামাজন আর শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোস।
উপায়#১০: অতি ধনীরা বিনিয়োগের ব্যাপারে খুব স্মার্ট
যারা বিনিয়োগের খুঁটিনাটি জানেন এবং এতে দক্ষতা অর্জন করেন, তারা দ্রুত ধনী হতে পারেন।অতি ধনীরা এ দক্ষতা কাজে লাগায় খুব পরিকল্পিত ভাবে। প্রথমে তাঁরা লাভজনক, স্কেলেবল ও টেকসই একটি ব্যবসা দাঁড় করান। তারপর একের পর এক অন্যের সময় ও শক্তি কিনে ফেলেন। এভাবে তাঁরা অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হন। এ কাজটি যিনি যত দক্ষতার সাথে করতে পারেন, তিনি তত সম্পদের মালিক।
উপসংহার
প্রকৃত ধনী হওয়ার কোন সংক্ষিপ্ত রাস্তা নেই। স্মার্ট লক্ষ্য স্থির করুন। সমাধান করা যায় এমন সমস্যা খোঁজে বের করুন, যা করতে আপনি পছন্দ করেন। এর সমাধান বের করার জন্য আপনি আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। কাল ক্ষেপন না করে যা পারেন শুরু করুন। নিজের দক্ষতা বাড়ান। টিম গঠন করুন। একজন মেন্টরের উপদেশ নিন। মিতব্যয়ী হন। কিছু উপার্জন হলে বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে ভালো জায়গায় বিনিয়োগ করুন। সর্বদা সৎ থাকুন। ধনী হওয়া আপনাকে আটকাবে কে?
For personal and professional success, you can take this course: Emotional intelligence
টাকা উপার্জন সংক্রান্ত অন্যান্য ব্লগ:
টাকার অভাব কখনও হবে না যদি এ শিক্ষা থাকে
কীভাবে একটি স্টার্টআপ তৈরি করার মাধ্যমে প্রচুর টাকা উপার্জন করা যায়?
কীভাবে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে আপনি ধনী হবেন?
কোন সম্পদগুলো মানুষকে ধনী করে?
যে দক্ষতা গুলো আপনাকে ধনী করবে।
১০টি সেরা বই, যেগুলো আপনাকে ধনী হতে সাহায্য করবে।
গ্রামে বসে কী কী ব্যবসা করা যায়?